রঙ তার কালো শেষপর্ব

 ---- আচ্ছা আপনাদের বংশে কি কখনও প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়ে হয়েছে?

---- না, না তো! কেন ডাক্তার সাহেব?
তন্ময় অবাক হয়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলো। তিনমাস পর তাহা আর তন্ময় এসেছে চেক আপ করাতে।
---- আমার খালাতো ভাইবোন আছে, একজন বোবা, অন্যজন হাটতে পারেনা। তাহা জবাব দিলো।
---- কিন্তু এখন আমি যা বলছি তা শুনার জন্য কি প্রস্তুত আছেন আপনারা?
---- বলুন ডাক্তার, সবধরণের কথা শুনার প্রস্তুতি আছে।
---- আমি বলবো এখনও সময় আছে, আপনারা বাচ্চা অ্যাবর্শণ করে ফেলুন।
--- হয়েছে কি আগে বলুন?
---- আমি জানিনা কেন এমন দেখাচ্ছে, বাচ্চার অবস্থা নরমাল নেই, একটা বিকৃত মাংসপিণ্ড লাগছে, কালো ছোপছোপ দাগ তার উপর। আমার নিজেরই ভয় লাগছে, হয় বংশগত কারনে নয় ভাইরাসগত কারনে এমন হচ্ছে। হয়তো তাহার শরীরে ক্যান্সার সেলগুলো পুরোপুরি শেষ হয়নি তাই ব্লাড গঠনে এরকম অবস্থা হয়েছে।
তাহা এসব শুনছিল না, ওর মনে পড়ে গেলো ওর খালাতো বোন ও এরকম রিপোর্ট পেয়ে ভয়ে বাচ্চা অ্যাবোর্শন করেছিল। ও সাথে সাথে মন শক্ত করে ফেললো। যা হয় হোক, ও যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাচ্চা নষ্ট করবে না তো করবেই না।
তন্ময় তাহার দিকে কাতর ভাবে তাকালো। ডাক্তার ও বললেন,
--- দেখো মা, তোমার ভালোর জন্য বলছি, তোমার জন্য ও এটা রিস্ক, আবারও নতুন করে ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে।
---- না ডাক্তার চাচা, আমি তা করবো না, আমার আল্লাহ যদি আমার জন্য নতুন করে পরীক্ষা তৈরি করেন তো আমি সেই পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত। আমার মৃত্যু আল্লাহ যেভাবে লিখছেন সেভাবেই হবে, আল্লাহ বলেছেন, "প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে"। মৃত্যুর মাধ্যমেই তো আল্লাহর সান্নিধ্য পাবো, আমি সেই যাত্রায় যেতে প্রস্তুত শুধু দোয়া করবেন আল্লাহ যেন ক্ষমা করে দেন। আর আমি কখনও চেকআপ ও করাবো৷ না। আগের যুগে মানুষ যে চেকআপ করায় নি, তাদের কি বাচ্চা হয়নি? চলো তন্ময় আমরা যাই।
একসাথে এতগুলো কথা বলে সে তন্ময়কে টান দিয়ে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
তাহা মনে কষ্ট পাবে বলে তন্ময় ও আর কিছু বললো না।
শুরু হলো তাহার নতুন জীবন, আস্তে আস্তে বাড়তে থাকলো ছোট্ট একটা প্রাণ, কেউ জানে না, তার শেষ পরিনতি কি হবে। কিন্তু তাহা মনে প্রচুর আশা আর আল্লাহর উপর ভরসা করে দিন অতিবাহিত করতে লাগলো। সাথে পড়তে থাকলো গর্ভাবস্তায় মায়ের করনীয় এবং আমল, সে অনুযায়ী আমলও শুরু করলো। গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের কি কি করতে হয় তন্ময় ও তাকে শিখিয়ে দিতে লাগলো এবং সব কাজে সাহায্য করতে থাকলো।
গর্ভাবস্থার জন্য কোরআন-সু্ন্নাহয় বর্ণিত কোনো নির্দিষ্ট আমল বা দোয়া নেই। বরং একজন স্ত্রী তাঁর স্বামী কর্তৃক গর্ভবতী হওয়াটাই একটি স্বতন্ত্র এবং এতটাই ফজিলতপূর্ণ আমল যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বিখ্যাত মহিলা সাহাবি সালামা রাযি.কে বলেছেন, তোমাদের কেউ কি এতে খুশি নয় যে, সে যখন স্বামী কর্তৃক গর্ভবতী হয় এবং স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্টও থাকে তখন (এই গর্ভকালীন) সে আল্লাহর পথে সর্বদা রোজা পালনকারী ও সারারাত নফল ইবাদতকারীর মতো সওয়াব পাবে? তার যখন প্রসব ব্যথা শুরু হয় তখন তার জন্য নয়ন শীতলকারী কী কী নিয়ামত লুকিয়ে রাখা হয়, তা আসমান জমিনের কোনো অধিবাসীই জানে না। সে যখন সন্তান প্রসব করে তখন তার দুধের প্রতিটি ফোঁটার পরিবর্তে একটি করে নেকি দেওয়া হয়। এ সন্তান যদি কোনো রাতে তাকে জাগিয়ে রাখে (অসুখ ইত্যাদির কারণে বিরক্ত করে মাকে ঘুমুতে না দেয়) তাহলে সে আল্লাহর পথে নিখুঁত সত্তরটি গোলাম আযাদ করার সওয়াব পাবে। (আলমু’জাম, তাবরানী: ৬৯০৮, আবু নুআইম: ৭০৮৯, মাজমাউজজাওয়াইদ: ৪/৩০৫ )
তবে এটাতো জানা কথা যে, সন্তান যখন মায়ের গর্ভে থাকে, তখন ভ্রুণ অবস্থা থেকেই মায়ের যাবতীয় চাল-চলন ও গতিবিধির বিস্তর প্রভাব সন্তানের ওপর পড়ে। অপরদিকে ভ্রুণ অবস্থা থেকেই শুরু হয় মায়ের অবর্নণীয় কষ্ট। কোরআনের ভাষায়, তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। (সূরা লুকমান: ১৪) আর একজন মায়ের এহেন কষ্টের ফসল ‘সন্তান’ যদি তাঁরই অসতর্ক ও আজেবাজে চাল-চলনের কারণে নেক, সৎকর্মশীল ও সুচরিত্রের অধিকারী না হয় তাহলে একদিন এ মা’ই নিজের গর্ভ-ব্যর্থতা স্বীকার করে বলে থাকে, তোকে গর্ভে ধারণ করে ভুল করেছি। এজাতীয় কথা-আল্লাহর কাছে পানাহ চাই-যেন কোনো মাকে বলতে না হয় এলক্ষে একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতি আল্লাহওয়ালাদের পরামর্শের ভান্ডার থেকে দশটি পরামর্শ পেশ করছি। আশা করি, উপকৄত হবেন—
এক- গোনাহ থেকে বিরত থাকুন:
প্রিয় গর্ভবতী মা! গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ইবাদতের ফিকিরের চাইতে গোনাহ ছেড়ে দেয়ার ফিকির অধিক করাটাই হবে আপনার বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। আর এটা করতে হবে, আপনার ভেতরে বেড়ে ওঠা সন্তানের জন্যই। যেমন, নাটক-সিরিয়ালপ্রীতি বর্জন করবেন, কণ্ঠস্বরকে সংযত করবেন, বিশেষ প্রয়োজন দেখা না দিলে ঘর হতে বের হবেন না। আপনার যে সকল গায়রে মাহরাম আত্মীয় রয়েছে, তাদেরকে আপনার সাথে দেখা সাক্ষাতের কিংবা পর্দা লংঘনের জন্য অনুমতি দেবেন না। এভাবে চলতে পারলে পবিত্র কোরআনের সুসংবাদ গ্রহণ করুন ﺇ ﻥَّ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻌُﺴْﺮِ ﻳُﺴْﺮﺍً — কষ্টের সাথেই আছে সুখ। (সূরা আলাম-নাশরাহ: ৬)
এই যে আরেকটি আয়াত দেখুন, যা আপনার জন্যও প্রযোজ্য যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেসব বড় গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পার। তবে আমি তোমাদের (ছাট) গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব। (সূরা নিসা: ৩১)
দুই- ধৈর্য্য ধারণ করুন : অসুস্থতা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা প্রভৃতি কারণে ধৈর্য্যহারা হবেন না। এভাবে ভাবুন, ‘এই সময়টার প্রতিটি মুহূর্ত আপনার জন্য জিহাদতূল্য ইবাদত’। এতে ধৈর্য্য ধারণ করা আপনার জন্য সহজ হবে। আপনার কষ্ট শক্তিতে পরিণত হবে। নবীজী ﷺ চমৎকার বলেছেন, ﺍﻟﺼَّﺒْﺮُ ﺿِﻴَﺎ ﺀٌ সবর হল জ্যোতি। (মুসলিম: ২২৩)
তিন-সময় মত নামাজ আদায় করুন:
এসময়ে অস্থিরতা বেশি কাজ করে। আর যথাসময়ে নামাজ অন্তরকে প্রশান্ত রাখে। এজন্যই নামাজের সময় হলে নবীজী ﷺ
বেলাল রাযিঃ কে বলেন, নামাজের ব্যবস্থা কর এবং তার মাধ্যমে আমাকে তৃপ্ত কর। (আবু দাউদ: ৪৩৩৩)
চার- জিকির করুন : অস্থিরতা দূরীকরণের কোরআনি-ব্যবস্থাপনা এটি। এটা আপনাকে ও আপনার গর্ভের সন্তানকে শান্ত রাখতে সহায়ক হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের মন প্রশান্ত হয় ; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই মন প্রশান্ত হয়। (সূরা রাদ : ২৮)
পাঁচ- শোকর আদায় করুন : দেখুন, মা হওয়ার মাঝেই নারীজন্মের স্বার্থকতা। কত নারী এমন আছে,গর্ভবতী হওয়ার জন্যে বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা করছে কিন্তু তাদের ভাগ্যে এই নেয়ামত জুটছে না। এজন্য যখনি মা হওয়ার আনন্দে পুলকিত হবেন তখনি আল্লাহর শোকর আদায় করুন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না। (সূরা বাকারা : ১৫২)
ছয়- বেশি রাত পর্যন্ত জাগ্রত থাকা থেকে বিরত থাকুন:
গর্ভাবস্থায় রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে স্বাস্থ্যহানী ঘটে। তাই ইশার নামাজ সময়ের শুরুতে পড়ে নিন। তারপর প্রয়োজনীয় কাজ সেরে যত দ্রুত সম্ভব ঘুমিয়ে পড়ুন। দেরি করে ঘুমোতে যাবেন না। অন্তত এতটা আগে রাতের বিছানায় যেতে হবে যাতে করে কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিন্তে যাওয়া যায় এবং ফজর যথাসময় পড়া যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
আর আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী। (সূরা নাবা : ৯)
সাত- ওযু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করুন : কেননা দৈহিক সুস্থতা ও আত্মিক প্রশান্তির ক্ষেত্রে ওযুর ভূমিকা অপরিসীম। বিশেষত, ঘুমানোর আগে ওযু করে নিবেন। এতে অনিদ্রার বিড়ম্বনা থেকে বাঁচা সহজ হবে। নবীজী ﷺ বলেছেন,যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাযের ওযুর মত ওযু করবে। (মুসলিম : ৪৮৮৪)
আট- আপনার সন্তানের জন্য কোরআন তেলাওয়াত করুন : প্রায় ২০ তম সপ্তাহে গর্ভের বাচ্চা শোনার সক্ষমতা অর্জন করে। মা প্রতিদিন কিছু কোরআন তেলাওয়াত করে বাচ্চার মাঝেও কোরআনের মাঝে সম্পর্ক জুড়ে দেয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. বলেন,
কোরআনের বিষয়ে তোমাদের উপর অবশ্য পালনীয় এই যে, কোরআন শিক্ষা করা এবং তোমাদের সন্তানদের কোরআন শিক্ষা দেয়া। কেননা এ বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে এবং তার প্রতিদানও দেয়া হবে। (শরহে সহীহ বুখারী, ইবন বাত্তাল : ৪৬)
এক্ষেত্রে অনেকে জানতে চান, কোন সূরা পড়ব? উত্তর হল, গর্ভাবস্থার জন্য মূলত নির্দিষ্ট কোনো সূরা নেই। তবে কোনো বুজুর্গ সূরার বিষয়বস্তুর প্রতি লক্ষ রেখে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এভাবে—
☞ প্রথম মাসে সূরা-আল ইমরান পড়লে সন্তান দামী হবে।
☞ দ্বিতীয় মাসে সূরা-ইউসুফ পড়লে সন্তান সুন্দর হবে।
☞ তৃতীয় মাসে সূরা মারিয়াম পড়লে সন্তান সহিষ্ণু হবে।
☞ চতুর্থ মাসে সূরা-লোকমান পড়লে সন্তান বুদ্ধিমান হবে।
☞ পঞ্চম মাসে সূরা-মুহাম্মদ পড়লে সন্তান চরিত্রবান হবে। ☞ ষষ্ঠ মাসে সূরা-ইয়াসিন পড়লে সন্তান জ্ঞানী হবে। ☞ সপ্তম, অষ্ঠম, নবম ও দ্বশম মাসে সূরা-ইউসুফ, মুহাম্মদ এবং ইব্রারাহিম কিছু কিছু পড়বে। ☞ ব্যাথা উঠলে সূরা-ইনশিকাক পড়ে পানিতে ফুক দিয়ে পান করলে ব্যথা কমে যাবে।
তাছাড়া ঘুমের পূর্বে অবশ্যই চার কুল তথা সূরা কাফিরূন, সূরা ইখলাস ও সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে হাতের তালুতে ফু দিয়ে সারা শরীরে হাত বুলিয় নিলে বহুবিধ ফায়দা পাওয়া যায়। এভাবে তিনবার করবেন।
নয়- দোয়ার অভ্যাস করুন: গর্ভকালীন সময়ে মাঝে মাঝে অসহায়বোধ হয়। এমনও মনে হয়, না-জানি এবার আমি মরে যাব কিনা! তাই গর্ভকালীন সময়ে দোয়ায় বেশি লিপ্ত হতে হয়। কেননা এসময়ের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ বলেন, ﺃَﻣَّﻦ ﻳُﺠِﻴﺐُ ﺍﻟْﻤُﻀْﻄَﺮَّ ﺇِﺫَﺍ ﺩَﻋَﺎﻩُ ﻭَﻳَﻜْﺸِﻒُ ﺍﻟﺴُّﻮﺀَ
বলো তো কে নিঃসহায়ের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন।
(সুরা নামল ৬২)
তাছাড়া আপনি আপনার সন্তানের মা। আর মায়ের দোয়া কবুল হয়। সুতরাং নেক, সুস্থ ও সুন্দর সন্তান কামনা করে বার বার দোয়া করুন। এক্ষেত্রে কোরআনের বর্ণিত দোয়াগুলোকে অগ্রাধিকার দিন। যেমন, এ দোয়াটি মুখস্থ করে নিতে পারেন— ﺭَﺏِّ ﻫَﺐْ ﻟِﻰْ ﻣِﻦْ ﻟَّﺪُﻧْﻚَ ﺫُﺭِّﻳَّﺔً ﻃَﻴِّﺒَﺔًۚ ﺍِﻧَّﻚَ ﺳَﻤِﻴْﻊُ ﺍﻟﺪُّﻋَﺎٓﺀِ হে আমার পালনকর্তা! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী। (আল ‘ইমরান: ৩৮)
পুত্র-সন্তান লাভের জন্য পড়তে পারেন— ﺭَﺏِّ ﻫَﺐْ ﻟِﻰْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺼّٰﻠِﺤِﻴْﻦَ হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে সৎকর্মশীল পুত্র সন্তান দান করুন। (আস-সাফফাত: ১০০)
দশ- আল্লাহর এ দু’টি গুণবাচক নাম পড়ুন: কোনো গর্ভবর্তী মহিলা যদি আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম (ﺍَﻟْﻤُﺘَﻌَﺎﻟِﻰْ) ‘আল-মুতাআ’লি’ এবং (ﺍَﻟْﻤُﺒْﺪِﺉُ ) ‘আল-মুবদিয়ু’ পড়তে থাকে তবে ওই মহিলা তার গর্ভকালীন কষ্টক্লেশ থেকে মুক্তি পায়।
উক্ত দশ পরামর্শ মেনে চললে
গর্ভবতী মা যেমন মহান আল্লাহর কাছে প্রিয় হয়ে ওঠবে, অনুুরূপভাবে তার ভেতরে বেড়ে ওঠা সন্তানও ‘নেক’ হবে। ইনশাআল্লাহ্।
আল্লাহ তাআলা তাওফিকদাতা।
তন্ময় অনেক বলেও তাহাকে আর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারলো না। শুধু নরমাল ঔষদ আর কিছু ভিটামিন খেতে থাকলো।
ছয়মাস অতিবাহিত..
সারারাত তাহা ঘুমাতে পারেনি অশান্তি আর ব্যাথার জন্য, স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার চাইতে ওর পেট টা বেশিই মোটা, তারউপর এই সময় থেকেই চলাফেরা করতে পারেনা। সবাই বলে ওর দূর্বলতার জন্য এমন হচ্ছে।
ভোরের দিকে ঘুম লাগলে তাহা আর ঘুমায়না ফজর নামাজ মিস হওয়ার ভয়ে। একদিন বসে বসে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল তন্ময় ওকে বললো, চলো ঘুমাবে, এমনিতেই সারারাত ঘুমাওনি, এখন যখন ঘুম আসছে একটু ঘুমাও।
---- তুমি কি জানো না গর্ভাবস্থায় ও আল্লাহ ফরজ নামাজ মাফ দেননি।"নিশ্চয় নির্দিষ্ট সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনের জন্য ফরজ করে দেওয়া হয়েছে" (সূরা -নিসা, আয়াত ১৩০)
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, অতঃপর তাদের পরে আসলো এমন এক অসৎ বংশধর যারা নামাজ বিনষ্ট করলো এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করলো, সুতরাং তারা অচিরেই জাহান্নামের শাস্তি অনুভব করবে" (সূরা -মারিয়াম, আয়াত-৫৯)।
--- হুমম, আমার বউটা যে এতোটা বুঝবে আমি কল্পনাও করিনি। আল্লাহ তোমাকে সব কষ্ট সহ্য করার তৌফিক দিন, নেক, সুস্থ সন্তান দান করুন।
--- আমার কি মনে হয় জানো?
---- কি? আমাদের দুইটি সন্তান হবে। আমি দুজনের অস্থিত্ব অনুভব করি।
---- তুমি তো ডাক্তারের কাছেই যেতে চাও না। কও করবো?
---- থাক লাগবে না। চলো তাহাজ্জুদ পড়ি।
তন্ময় তাহার সুবিধার জন্য রুমের ভিতরে সব ব্যবস্থা করে রাখছে, রুমের ভিতরেই ফ্রিজ, হিটার, পানি,বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস সব হাতের কাছেই রেখেছে। প্রচুর সময় দেওয়ার ও চেষ্টা করে, ওকে নিয়ে বাহিরে ধরে ধরে হাটায়, অবসর সময়ে তিলাওয়াত আর গজল গেয়ে শুনায়, যাতে বাচ্চাটাও শুনতে পারে। প্রতিদিন ওজন, ব্লাড প্রেসার চেক করে।
আটমাস অতিবাহিত হওয়ার পর তাহার মা ও চলে আসলেন, শাশুড়ি তো আছেনই। তন্ময় একই সাথে খুশি ও আবার খুব চিন্তাও করছে আল্লাহ তাদের তাকদিরে কি রাখছেন সেই চিন্তা করতে করতে শেষ।
ডেট এর একমাস আগেই তাহার লিভার পেইন শুরু হয়ে গেলো। কোন রিস্ক না নেওয়ার জন্য সাথে সাথেই তাহাকে নিয়ে ওরা হসপিটাল এ এডমিট হলো। ডাক্তার ও অবস্থা ক্রিটিকাল দেখে তাড়াতাড়ি অটি তে ঢুকলেন।

সন্ধ্যার আধার নেমে আসছে চারিদিকে, প্রকৃতি তে কেমন একটা গুমোট ভাব। গাছপালাগুলো যেন স্তব্ধতার চাদরে আবৃত। আজ যেন সবার সাথে সবার আড়ি, সবাই যেন তন্ময়ের সাথে নিরবতায় অংশ নিয়েছে। অনেক বলার পরও ডাক্তার ওকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকতে দেন নি। অবস্থা নাকি খুবই খারাপ, কিছু হলে ও সহ্য করতে পারবে না। আজ যেন তন্ময় কাঁদতেও ভুলে গেছে, হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রকৃতি দেখছিল। দূরে একটা পাখি করুণ সূরে ডেকে উঠলো, লাল নীল নিয়ন বাতিতে শহর যেন নতুন সাজে সজ্জিত হওয়ার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। রাস্তায় ব্যস্ত মানুষের আনাগোনা, হঠাৎ দেখলো একজন গরিব মা তার কোলে ছোট্ট একটা বাচ্চাকে নিয়ে গুটিশুটি মেরে বসে আছে। ও পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে গায়ের চাদরটা ওদের গায়ে দিয়ে নিরবে চলে আসলো। বাচ্চাটা ওর দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো। তাতেই তন্ময় এতো খুশি হলো যে সে নিজেও হেসে দিলো। বারান্দায় ওর মা দাড়িয়ে সবকিছু দেখছিলেন, ও কাছে আসতেই তিনি বলে উঠলেন, চিন্তা করিস না বাবা, আল্লাহ চাহেন তো সব ঠিক হয়ে যাবে।
--- কিন্তু আম্মু ২ঘন্টা তো হয়ে গেলো। এখনও ওরা বের হয়না কেন? আমার ভালো লাগছে না আম্মু, আমি মসজিদে যাই। আমাকে ফোন দিয়ে কি হলো জানিও।
তন্ময় পা বাড়াতে যাবে তখনই ডাক্তার হাসিমুখে বেরিয়ে আসলেন।
---- মাশাআল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ, আপনাদের জোড়া বাচ্চা হয়েছে, এক ছেলে, এক মেয়ে। খুবই রেয়ার হয় এমন একসাথে ছেলে মেয়ে।
----- আলহামদুলিল্লাহ! তা বাচ্চা আর তাহা কেমন আছে ডাক্তার সাহেব?
---- তিনজনেই ভালো আছে, আমরা যেমন ভয় পেয়েছিলাম তেমন কিছুই হয়নি। বরাবরই আপনার ভাগ্য ভাল জনাব তন্ময়।
তন্ময়দের সাথে তাদের পারিবারিক ডাক্তার এসেছিলেন, তিনি তাহার সব ডাক্তারকে বলেছিলেন যাতে অপারেশন এর সময় ওরা খেয়াল রাখে। তাই এখন ডাক্তার এই কথা বললেন।
---- সে জন্য আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া। আম্মু তুমি ওদের পাশে যাও, আমি মসজিদ থেকে আসছি।
--- আগে ওদের দেখে যা।
--- না আম্মু, আগে আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জানিয়ে আসি। তুমি যাও আমি আসছি, আব্বুকে ও নিয়ে যাও।
দু রাকায়াত নামাজ আদায় করে তন্ময় কেবিনে এসে ঢুকলো। মনে তার আনন্দ সীমাহীন, আজ যেন সে আকাশে ডানা মেলে উড়ছে। আজ সে বাবা হয়েছে, বাবা হওয়া যে কতটা আনন্দের শুধু যে হয় সে জানে।
রুমে ঢুকে দেখলো তাহা শুয়ে আছে সেলাইন চলছে, আর আব্বু আম্মু দুইটা বাচ্চার পাশে বসে আছে। কি সুন্দর শান্তভাবে শুয়ে আছে তারা, কত নিষ্পাপ চাহনী, মনে হচ্ছে দুটি তারা জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। মুখের দিকে তাকিয়ে একযুগ পার করা যাবে এতো মায়াবী ছোট ছোট দুইটা মুখ। তন্ময় ধীরে ধীরে এসে ওদের পাশে বসলো তারপর দুইটা নরম তুলতুলে হাত ধরে সালাম দিয়ে বললো, বাবুরা এইতো তোমাদের বাবা আসছি। আমি তোমাদের কোনদিন কোন কষ্ট দেবো না, আদর্শ সন্তান করে গড়ে তুলবো। এদের সাথে পরিচয় হয়েছে তো? ইনি হচ্ছেন তোমাদের দাদুভাই আর ইনি তোমাদের দাদুমনি। আর তোমাদের আম্মু ওইযে শুয়ে আছে, আর নানুরা? হুমম উনারাও আসছেন। পরে পরিচয় করিয়ে দেবো। আপাতত তোমাদের আদর দিই।"
একমনে কথা বলছিল আর ওর চোখ দিয়ে শ্রাবণধারা বইছিল। দুজনের কপালে আলতো চুমো দিয়ে তন্ময় তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কান্না শুরু করলো।
--- আব্বু আমি বাবা হয়ে গেছি। আমার দুইটা বাচ্চা আছে, ওরা আমার, আমার নিজের বাচ্চা। আমার কত খুশি লাগছে বুঝাতে পারবো না আব্বু, তুমিও এমন খুশি হয়েছিলে তাইনা আব্বু? কত কষ্ট দিয়েছি তোমায় আমাকে ক্ষমা করে দাও আব্বু।
--- হ্যারে বাবা, বাবা হওয়া কতটা আনন্দের তা বুঝানো যাবে না, আমিও এরকম খুশিতে কেঁদেছিলাম। এখন বউমার কাছে যা, মা আমার কত কষ্ট পেয়েছে।
তন্ময় যখন তাহার কাছে গেলো তখন ওর বাবা মা কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন তাদেরকে একান্ত কিছু সময় দেওয়ার জন্য, আর কিছু কেনাকাটা ও তো করতে হবে।
---- প্রিয়া আমার! আজ আমি যতটা খুশি হয়েছি, মনে হয়না আর কোনকিছুতে এতো খুশি হতাম। তোমাকে পেয়ে আমি ধন্য হয়েছি প্রিয়া..!
---- কি আমি বলিনি আমাদের দুটি বাচ্চা হবে?
---- হুমম, আমার পাগলীটার কথাই ঠিক। তবে এখন এরচেয়ে কঠিন কাজ সামলাতে হবে।
--- হুমম কঠিনই তো, বাচ্চা পালা কি সোজা? তারউপর দুই দুইটা বাচ্চা! আমাদের ভালই মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে।
--- বাচ্চা লালনপালন যতটা কঠিন তারচেয়ে বেশি কঠিন তাদের আদর্শ শিক্ষায় গড়ে তুলা।
--- বাবা মা আর তুমি আমার পাশে আছো, তাই আমার কোন চিন্তা নেই।
--- হুমম, আমি তো মনপ্রাণ দিয়ে তোমাকে সাহায্য করবো। তন্ময় তাহার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে কথাগুলো বললো। আর তখনই একটা বাচ্চা কেঁদে উঠলো।
--- এইরেহ্ উনারা যে একা একা শুয়ে আছেন সেটাই তো ভুলে গেছি!!
তন্ময় উঠে গিয়ে দুজনকে তাহার পাশে এনে শুয়ালো।

সাতদিনের মধ্যে দুজনের আকিকা এবং নাম রাখা অনুষ্টান সম্পন্ন হলো।
দুজনে মিলে অনেক চিন্তা করে নাম রাখলো।
'আব্দুল্লাহ উমার' আর 'আয়েশা মিম'। শুরু হলো বাবা মা হওয়ার নতুন মিশন।

আয়েশা আর উমার দেখতে দেখতে একবছরে পদার্পণ করলো, গুটিগুটি পায়ে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ায় ওরা।
এখন থেকেই উমার বুঝে মাথায় টুপি দিতে হবে, দাদুভাই আর আব্বু সবসময় দেয়, আয়শা ও মায়ের মাথায় কখনও ওড়না পড়ে গেলে সেটা মাথায় তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে। আজান শুনলে টেনে টেনে নামাজের রুমে নিয়ে যায়।
সবাই ওদের ইসলামিক আদর্শে বড় করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঘুম পাড়ানোর আগে তাহা ওদের গজল, তিলাওয়াত এবং ইসলামিক গল্প, সাহাবাদের কাহিনী বলে শুনায়। তবে ওরা তিলাওয়াত আর নবী (সঃ) এর কাহিনী শুনতেই বেশি পছন্দ করে। ভোরে তন্ময় নামাজ শেষে আয়শা ও উমারকে কোলে নিয়ে দুলে দুলে তিলাওয়াত করে।

এখন আয়শা উমার বুঝতে শিখেছে, আদো আদো কথা বলতে পারে, এর মধ্যে ওরা আমপারার কয়েকটা সূরা ও শিখে ফেলেছে। ওরাই এখন বাবা মাকে সাহাবাদের কাহিনী শুনায়। মনে হয় ওরাই বাবা মা, আর তাহা তন্ময় ওদের বাচ্চা, এটা সবাই খুব ইনজয় করে। একদিন বাড়িতে তন্ময়ের ভাই তানিম আসলো, আর আয়শা তার মাকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে দরজা ভেজিয়ে দিলো। দাদুমনি জিজ্ঞেস করতেই বললো," আম্মু তো সুধু দাদুভাইল আল আব্বুল সামনে যায়। চাচুল সামনে গেলে আল্লাহ পাপ দেবে।" গায়েরে মাহরাম না বুঝলেও ও এতদিন থেকে দেখে আসছে ওর মা শুধু দাদুভাই আর তন্ময়ের সামনেই গিয়েছে। তাই ও এটাই শিখেছে।
---- এইতো আমার সোনামনি, তা তুমি কেনো রুমে বসে আছো? চাচুর সামনে যাবে না?
---- যাবো? আল্লাহ পাপ দেবে না?
---- না দাদুমনি, তুমি গেলে আল্লাহ পাপ দেবে না চলো, নাহলে চাচু কষ্ট পাবে।
সামনে গিয়েই আয়শা তানিমকে সালাম দিলো।
---- ওয়া আলাইকুমুস সালাম। মাশাআল্লাহ্ আম্মু এদেরকে তো পুরোপুরি মুমিন ঘরের ছেলেমেয়ে হিসেবে গড়ে তুলেছো, উমার ও আমাকে সালাম দিলো।
---- আলহামদুলিল্লাহ! আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
--- এখন বাড়ি তো চলো আম্মু, তোমাদের অন্য ছেলেমেয়ের চিন্তা কি করতে হবে না?
--- করি তো বাবা, তবে কলিজার টুকরোগুলো ছেড়ে কোথাও থাকতে পারবো না যে, একদিন গিয়ে সবাইকে দেখে আসবো।

দুজনের সাথে অনেক কথা বলে, গল্প বলে খাওয়াদাওয়া শেষ করে তানিম বিদায় নিলো। তানিমের এবং অন্য দুইজনেরও বিয়ে হয়ে গেছে, তবে বউ এতোটা ধার্মিক না, আর বাবা মা ওদের সাথে থাকতেও তেমন পছন্দ করেন না। তাই ঘুরেফিরে তন্ময়ের কাছেই চলে আসেন, আর তাহা যেন উনাদের ছাড়া থাকতেই পারে না।

বাচ্চাদের শিখানোর জন্য তারাও কিছু নিয়ম মেনে চলতে শুরু করলো,
সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাইকে সালাম দেওয়া, পুরুষেরা মসজিদে আর মেয়েরা নামাজের রুমে নামাজ আদায় করে তিলাওয়াত করা। নামাজের রুমে অবশ্য সবার জন্য জায়নামাজ বিছিয়ে তারউপর কোরআন রাখা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শেষে সবাই কিছুক্ষণ তিলাওয়াত করে। সেসময় উমার আর আয়শাও তাদের জন্য রাখা জায়নামাজে দাঁড়িয়ে তাদের মতো নামাজ পড়ে, বসে বসে গুন গুন করে তিলাওয়াত করে।
প্রথম যেদিন ওদের নিয়ে তন্ময় মাদরাসায় ভর্তি করতে গেলো তখন আয়শা যাবেই না, ও মায়ের মতো বোরকা পরে যাবে বায়না ধরলো।
--- আম্মু তুমি যখন বড় হবে, মা বুঝে যাবো তোমার বোরকার প্রয়োজন, তখন এমনিতেই বোরকা বানিয়ে দেবো এখন হিজাব বেধে দিয়েছি ওভাবেই যাও।
---- সত্যি দিবে তো?
---- হুমম, সত্যি দেবো। হুজুরদের সামনে গিয়ে সালাম দিও দুজনেই, উনারা যা জিজ্ঞেস করবেন তার উত্তর দিও, মারামারি করবে না। ভালো ছেলেমেয়েরা কখনও মারামারি করেনা। একা একা বসলে মনে মনে জিকির পড়বা বুঝেছো?
---- জি আম্মু বুঝেছি, আসসালামু আলাইকুম। দুজনেই একসাথে বলে বাবার সাথে রওয়ানা দিলো।
হুজুররা ওদের কথা বলার আদব আর অনেক পড়া শেষ হয়ে গেছে, আমপারা পুরো মুখস্ত, নামাজের নিয়মকানুন সব জানে দেখে যারপরনাই অবাক হলেন। পাঁচ বছরের বাচ্চারা এতোকিছু শিখে গেছে!!

আয়শা উমার দুজনেই তাদের কাজগুলো যথাসাধ্য নিজেরা করার চেষ্টা করে, যেটা পারে না সেটাই শুধু বাবা মা বা দাদুকে বলে। অবসর সময়ে দাদুর পা টিপে দেয়, পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় সবার কথা শুনে। মারামারি ও করে না, মিথ্যা ও বলে না। এই বয়সেই সময়মতো সালাত আদায় করে, তন্ময় বলে, আদায় করুক, তখন অভ্যাস হয়ে যাবে।
একদিন তাহা নামাজ পড়ছিল না, তারউপর বেশি খারাপ লাগায় নামাজের সময় বিছানায় শুয়ে আছে তখন উমার আয়শা দুজনেই মাকে নামাজের জন্য টানাটানি শুরু করে দিলো।
তখন তন্ময় বললো, তোমাদের আম্মু আজ নামাজ পড়বে না, চলো আমরা নামাজ পড়ে নেই।
---- না না, আম্মু কেন নামাজ পড়বে না, তাহলে আল্লাহ রাগ করবেন, আমরা আর একসাথে বেহেশতে থাকতে পারবো না। আয়শা কাঁদোকাঁদো গলায় তন্ময়কে বললো।
---- আসো আগে নামাজ শেষ করি, সময়মত নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। তারপর আমরা কথা বলবো।
নামাজ শেষ করে তন্ময় ওদেরকে বুঝালো, প্রতিমাসে তোমাদের আম্মুর চার পাঁচ দিন নামাজ ছুটি থাকে, এসময় আম্মু একটু অসুস্থ থাকে কষ্ট হয়, তাই আম্মুকে তখন বেশি খেতে হয়, ঘুমাতে হয়, বিশ্রাম নিতে হয়। তখন আম্মুকে বিরক্ত করবে না, পানি এনে দিবা, খাবার এনে দিবা, তখন তোমাদের আম্মুকে জ্বালাবে না, বুঝেছো?
---আব্বু তোমার ছুটি থাকে না?
---- নারে বাবা, এটা শুধু মেয়েদের ছুটি, বড় হলে আয়শা মনির ও ছুটি থাকবে, তখন বোনকেও আদর করবে বুঝেছো? আর বড় হলে এমনিতেই বুঝবে ছুটি কেন হয়।
---- হুমম আমি আয়শাকে আর জ্বালাবো না। উমার আয়শার কাধে হাত রেখে বললো।
নামাজ তিলাওয়াত শেষে দুজনেই বাবার সাথে নাস্তা বানালো তারপর মায়ের জন্য নিয়ে গেলো।
---- দুঃখিত আম্মু, তোমার এখন ছুটি তাই নামাজ পড়ছো না। আমরা তোমাকে বিরক্ত করবো না। এখন এগুলো বেশি বেশি খাও।
---- তোমাদের আব্বু বলেছে বুঝি? তাহা মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো।
---- হুমম, আব্বু বলেছে বড় হলে আয়শার ও ছুটি হবে, তখন আয়শাকেও অনেক আদর যত্ন করতে হবে।
---- "আমার সোনা আব্বুটা" বলে তাহা উমারকে চুমু দিলো।
---- আম্মু আমাকে আদর দেবে না?
---- হুমম, মেয়েদের তো বেশি আদর দিতে হয়, বলে তাহা আয়শাকে কোলে টেনে নিলো।
---- আর আমাকে কম আদর করবে, বুঝেছি আমি ভালো না, আমি পঁচা।
---- নারে আব্বু, বড় হলে আয়শা আমাদের ছেড়ে চলে যাবে তো, তাই তাকে বেশি আদর করছি, আর মেয়েদের আদর করলে আমাদের রাসুল (সঃ) খুশি হোন।
---- কেন চলে যাবে আব্বু?
---- বড় হলে বোনকে বিয়ে দিতে হবে, তখন সে স্বামীর বাড়ি চলে যাবে, আর তোমাকে বিয়ে করালে আরেকটা মেয়ে আমাদের ঘরে আসবে। ঘরে ঢুকে তন্ময় কথাগুলো বললো।
---- এমন নিয়ম কেন আব্বু?
--- যখন বড় হবে তখন বুঝবে, এখন নাস্তা করো।
--- তাহলে আমিও আর কখনও আয়শাকে মারবো না, সবসময় আদর করবো।

এভাবেই শিখা শিখানো আর ইসলামিক আদর্শে বড় হয়ে উঠতে লাগলো দুটি শিশু। ওরা যেন নিষ্পাপ কোন মাটির পুতুল যেভাবেই গড়ে তুলা যাবে সেভাবেই বড় হয়ে উঠবে। তাহা মনে মনে অনেক খুশি, আল্লাহর কাছে বারবার শোকরিয়া আদায় করে আল্লাহ তাকে সৎপথে এনেছেন, তন্ময়ের মতো স্বামী দান করেছেন, আর দান করেছেন দুটি ফুটফুটে নিষ্পাপ শিশু। তন্ময় ছাড়া যাদের এমন শিক্ষা দেওয়া যেতো না।
আর তন্ময় ভাবে কালো বলে কোন কথাই নেই, একজন আদর্শ বউ আর আদর্শ মা-ই দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সুন্দরী, সবচেয়ে বড় নিয়ামত। আল্লাহর কাছে সবসময় সেজন্য শোকরিয়া আদায় করে। সেজন্যই রাসুল (সঃ) বলেন, উত্তম স্ত্রী সেই, যার দিকে তাকিয়ে স্বামী আনন্দিত হয়। স্বামী কোন আদেশ করলে তা পালন করে, এবং স্বামী যা অপছন্দ করেন, স্ত্রী তা করেনা।"
(মিশকাত :৩২৭২)

Comments