---আমি কি রুমে আসতে পারি ম্যাডাম..? স্মিত হাসি দিয়ে তন্ময় জিজ্ঞেস করলো।
--- প্লিজ আমাকে আর লজ্জা দিও না। আসো, আজ থেকে তুমি এই রুমেই থাকবে।
--- কেনো বলতো..? আলাদা রুমে থাকলে সমস্যা কি? রুমে এসে ওর চোখে চোখ রেখে তন্ময় জিজ্ঞেস করলো। মুখে তার দুষ্টামি হাসি। তাহা লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেললো।
--- সেটা আপনি জানেন জনাব..!
---- একটা কথা কিন্তু বলো নি এখনও..
--- কি কথা?
---ভালোবাসি কথাটি এখনও বলোনি তুমি।
---- আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তন্ময়। বিয়ের দিন তোমার কথা, তোমার আচরণ দেখে সেদিনই ভালোবেসে ফেলেছি। তারপর ডায়েরি পড়ে সেই ভালোবাসা কতটুকু গভীরে চলে গেছে সেটা তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।
তাহা তন্ময়ের বুকে মাথা রেখে আবেগ ভরে কথাগুলো বললো। তারপর আবার বাথরুমে দৌড় দিলো।
একটুপরে বেরিয়ে আসলে তন্ময় জিজ্ঞেস করলো,
--কি হয়েছে তোমার? অ্যাসিডিটি হয়েছে নাকি?
--- না মানে, কি বলবো আমার..৷
---- আহা বলো না কি হয়েছে? আমাকে বলতে লজ্জা কি? স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোন পর্দা, কোন গোপনীয়তা, কোন লজ্জা থাকতে নেই। অবশ্য আমরা এখনও স্বামী স্ত্রী পুরোপুরি হইনি আরকি। তা বলো তোমার সমস্যা কি?
---- কিছু না, বলে তাহা ব্যাথায় মুখ বিকৃত করে ফেললো, শেষে ব্যাথার প্রকোপ সহ্য করতে না পেরে কেঁদে ফেললো।
তন্ময় তাহাকে ধরে এনে বিছানায় বসাতে চাইলে তাহা তাড়াতাড়ি বাঁধা দিয়ে উঠলো,
--- না না, বেড এ বসলে সব ভরে যাবে, আমি বেড এ বসছি না।
---- তাহা, বলো কি হয়েছে তোমার? এমন আচরণ করছো কেনো? কিসে ভরে যাবে?
---- রক্ত, আমার পিরিয়ড হয়েছে, আর প্রথম প্রথম ব্লিডিং টাও বেশি হয়। বাট প্যাড বা কিছুই পাচ্ছি না, ব্যাথাও বাড়ছে খুব। আল্লাহ! আমি আর সহ্য করতে পারছি না, তুমি গিয়ে এই ঔষধগুলো নিয়ে আসো, তাহা ঔষদের নাম বলে দিলো।
তন্ময় ওকে দাঁড় করিয়ে রেখে কাভার্ড খুলে প্যাড, প্যান্টি বের করে দিলো, "তুমি রেডি হয়ে নাও, আর এই জামাটা চেইঞ্জ করে নাও, ফ্রেস লাগবে। আমি আসছি..
তারপর কিচেনে গিয়ে হট ওয়াটার ব্যাগ এ গরম পানি, আর আদা চা করে নিয়ে আসলো। তাহা তখন বালিশ চাপা দিয়ে শুয়ে কাঁদছে। তন্ময় তাহাকে পাশে বসিয়ে আদা চা খেতে দিলো আর সে ওর পেঠে কোমরে গরম পানির স্যাঁক দিতে লাগলো। যেন এটা একটা স্বাভাবিক অসুখ, তাই সেবা করে তাহাকে সুস্থ করে তুলা তন্ময়ের কাজ। তাহা অবাক হয়ে ওর কাজগুলো দেখছিল। কতো শান্ত স্নিগ্ধ দৃষ্টি, মনোভাব, মুখের মধ্যে নেই কোন কুটিলতা।
---- তুমি এসব জানো কিভাবে? আর এসব কিনে এনেছিলে কেনো? তাহা প্রশ্ন করলো।
---- এসব মেয়েলী বিষয় হলেও জেনে রাখা প্রত্যেকের জন্য জরুরী। আমি তোমার কথা ভেবেই কেনাকাটা করার সময় এসব কিনে নিয়েছি। আর তাছাড়া একটা মেয়ে তখন খুব একাকিত্ব আর কষ্টের মাঝে সময় অতিবাহিত করে। তখন যদি তার স্বামী তাকে সঙ্গ না দেয়, সেবা না করে তাহলে মেয়েটার কষ্ট তো আরও বেড়ে যাবে। তাছাড়া আমাদের রাসুল (সঃ) ঋতুকালীন সময়ে উম্মুল মুমিনীন দের অনেক যত্ন করতেন।
--- অনেক পুরুষ মনে করে এই বিষয়টা নাহলে ভালো হতো। তারা শুধু কাপুরুষের মতো নারী ভোগ করতেই পারে। আমার নিজের দেখা, এসময় এরা স্ত্রীর সাথে ভালো আচরণ ও করে না। আবার অনেকে মানতে চায়না যে এসময় স্ত্রী সাহচর্য নিষেধ। নাউজুবিল্লাহ!
--- হুমম, তুমি ঠিক বলেছো, এসময় সহবাস করা হারাম, কিন্তু নারী সঙ্গম ব্যতিত একসাথে ঘুমানো, খাওয়া দাওয়া, এমন কি বাকি সব ব্যাপার জায়েজ আছে।
রাসুল (সা:) এই অবস্থায় প্রায় সময় উম্মুল মু'মিনীন হযরত খাদিজা (রা:) এর কোলে মাথা রাখতেন, এবং তার মৃত্যুর পর আয়েশা (রা:) এর উরুর উপর মাথা রেখে শুতেন। যখন আয়েশা (রা:) ঋতুবতী অবস্থায় উপনীত হতেন, তখন তিনি রাসুল (সা:) তার উরুর উপর শুয়ে কোর'আন তিলাওয়াত করতেন।
হযরত আয়েশা (রা:) বলেন আমি যখন পিরিয়ড অবস্থায় পানি পান করতাম, এবং পাত্রটা রাসুল (সা:) এর দিকে এগিয়ে দিতাম তিনি সেখানেই মুখ লাগিয়ে পান করতেন যেখানে আমি মুখ লাগিয়ে পান করতাম। আমি পিরিয়ড অবস্থায় গোশত ছিড়ে খেতাম, হুজুর (সা:) সেখান থেকেই গোশত ছিড়ে খেতেন, এবং হাড্ডি চুষে খেতেন।
তোমার ব্যাথা কি কিছুটা কমেছে?
--- নাহ্ কমছে না, তবে কম ফিল করছি আলোচনায় থাকায়।
তন্ময় তাহার মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ইসলামিক সঙ্গিত গাইতে লাগলো।
---- বাহ্ তোমার গলা তো খুব সুন্দর! কুরআন তিলাওয়াত করো, মুখস্ত আছে?
--- জানিনা, তবে মাঝে মাঝে গাই। কোরআন হেফজ করার সুযোগ হয়নি তবে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ সূরা মুখস্ত আছে, তিলাওয়াত করছি শুনো। তন্ময় সূর ধরে তিলাওয়াত করছে আর তাহা শুনছে, ব্যাথায়, ভালো লাগায় সব মিলিয়ে ওর চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে। এ যেন না পেয়ে অনেক কিছু পাওয়ার সুখ, আহ্ এর নামই তো বেঁচে থাকা। এখন মরে গেলেও শান্তি।
তন্ময় সূরা আর রাহমানের
ইউ‘রাফুল মুজরিমূনা বিছীমা-হুম ফাইউ’খাযুবিন্নাওয়া-ছী ওয়াল আকদা-ম।
"অপরাধীদেরকে চিনতে পারা যাবে তাদের চেহারা থেকেই, আর মাথার ঝুঁটি ও পা ধরে তাদেরকে পাকড়াও করা হবে।"
(আয়াত-৪১)
ফাবিআয়্যিয়ালাহি রাব্বিকুমা তুকাজ্জিবান, " অতএব হে, (জ্বীন ও মানব জাতি) তেমরা তোমাদের রবের কোন কোন নিয়ামত অস্বীকার করবে"
(আায়াত-৪২)
তিলাওয়াত করছিল তখনই তাহা চিৎকার করে কান্না শুরু করলো।
---- কি হলো তাহা, কাঁদছো কেন?
---- আমি আল্লাহর কাছে গিয়ে কি জবাব দিব? আমি যে পাপিষ্টা, আমার কোন ক্ষমা নেই।
---- নাগো, ভুল কথা তুমি যদি তোমার ভুলের জন্য অনুতপ্ত হও আর আল্লাহর কাছে তওবা করো তাহলে আল্লাহপাক তোমার গোনাহগুলোকে পূন্যে পরিনত করে দিবেন।
তুমি শুয়ে থাকো আমি আসরের নামাজ টা পড়ে আসি। তবে সবচেয়ে ভালো হয় উঠে অজু করে এসে যদি জায়নামাজে বসে জিকির করো।
---- দেখি উঠতে পারলে। তবে এই অবস্থায় আমি বোধহয় পারবো না।
--- চেষ্টা করে দেখো, তাতে ইবাদাতে অলসতা আসবে না। তবে আমি এখন একটা সুন্নাত আদায় করতে চাই বলে তন্ময় তাহার কপালে আলতো করে ঠোট স্পর্শ করলো। তারপর মুচকি হেসে চলে গেলো। তাহা সেদিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
তন্ময় মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে এসে দেখে তাহা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে আর ওর কোমরের নিচ থেকে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। ও তাড়াতাড়ি করে এসে তাহাকে কোলে তুলে বসালো তারপর পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করলো।
--- কি হয়েছে তোমার তাহা? অজ্ঞান হলে কিভাবে?
---- ব্যাথায়... খুব ব্যাথা করছে আমার... আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
---- আগে তোমার আর এরকম হয়েছিল?
--- হতো, তবে এতো ব্যাথা না। এবার যে কি হলো আমার। তাহা আবার ও তন্ময়ের কোলে ঢলে পড়লো। তন্ময় কি করবে বুঝতে পারছে না, ও মাকে ফোন দিয়ে আসার কথা বলে, ডাক্তারকে ফোন দিলো। তারপর গরম পানি করে তন্ময় তাহাকে বাথরুমে নিয়ে কোমর পর্যন্ত ধোয়ে আনলো। ততক্ষণে বাড়ি কাছে থাকায় তন্ময়ের বাবা মা এসে হাজির হয়েছেন।
ডাক্তার ও এসে গেলেন।
উনি একটা ইনজেকশন পুশ করে দিয়ে বললেন "হয়তো বেশি ব্যাথা আর না খেয়ে দূর্বল হওয়ার জন্য এমন হয়েছে। তবে এতোটা ব্লিডিং কেনো হচ্ছে বুঝতে পারছি না। আমার পরামর্শ ভালো হওয়ার পর একবার সার্জিকেল, এবং কনসালটেন্ট ডাক্তারকে দেখাবেন।"
---- কোন বড় সমস্যা নাকি ডাক্তার সাহেব?
---- আমি তা বলতে পারছি না।
ডাক্তার চলে যাওয়ার পর তন্ময়ের মা রান্নাঘরে নাস্তা বানাতে গেলেন। তন্ময়ের আব্বু উনার পিছু পিছু গিয়ে বললেন, আগে একগ্লাস দুধ আর ডিম দিয়ে আসো, আমি বাকি টা রেডি করছি। মেয়েটা সত্যিই দূর্বল, আর আমি চাই কিছুদিন থেকে মেয়েটাকে ভালো করে খাইয়ে, কেয়ার করে যাও।
--- হুমম আমিও তাই ভাবছি, ফল কাটতে কাটতে তন্ময়ের মা জবাব দিলেন। তিনি ফল দুধ আর ডিম নিয়ে রুমে দিয়ে আসলেন।
--- কিচ্ছু বাকি থাকে না যেন। সব খাওয়াবি ওকে, এসময় বেশি খাওয়ার দরকার, তারপর ওর দূর্বল অসুস্থ শরীর। আমি রান্না বসাচ্ছি গিয়ে, ওকে মোটা না বানিয়ে আমি যাচ্ছিনা।
তন্ময় তাহাকে একটা বই এনে দিয়ে বললো, এটা তুমি পড়ো আমি খাইয়ে দেই। তাহা দেখলো হায়েজ কালিন সময়ে মেয়েদের জন্য কিছু মাসআলা, মাসায়েল রয়েছে। ও আগ্রহ নিয়েই পড়া শুরু করলো,
"নারীর রোজা ও জরুরি ২২টি মাসআলা"
.
হাদিসে আছে, উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হলো হায়েজ থেকে পবিত্রতার পর মহিলারা কি নামাজ ও রোজার কাজা আদায় করবে? তিনি বললেন, এ অবস্থায় আমাদের রোজার কাজা আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে নামাজের নয়।
রমজান মাসে মহিলাদের পিরিয়ডের রোজা না রাখলে অথবা রোজা রাখার পর পিরিয়ড শুরু হলে তার জন্য পানাহার করা বৈধ। তবে অন্য লোকদের সামনে পানাহার করা উচিত নয়। দিনের বেলায় যদি ঋতু বন্ধ হয়ে স্বাভাবিক হয়ে ওঠে, তাহলে দিনের বাকি অংশে রোজাদারের মতো পানাহার ও যৌনাচার বর্জন করা ওয়াজিব। [আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪২০] এ প্রসঙ্গে হাদিসে আছে, উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হলো হায়েজ থেকে পবিত্রতার পর মহিলারা কি নামাজ ও রোজার কাজা আদায় করবে? তিনি বললেন, এ অবস্থায় আমাদের রোজার কাজা আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে নামাজের নয়।’ [সহিহ বোখারি ও মুসলিম]
১. মাসআলাঃ
হায়েজ (মাসিক পিরিয়ড), নেফাসের (প্রসব পরবর্তী স্রাব) সময়গুলোতে রোজা রাখা নিষেধ, তবে পরবর্তীতে এ দিনগুলোর রোজার কাজা করতে হবে।
২. মাসআলাঃ
পবিত্র অবস্থায় রোজা রাখার পর যদি হায়েজ শুরু হয় বা সন্তান প্রসব হয়, তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং পরে তা কাজা করতে হবে। চাই সেটা ফরজ বা নফল রোজা হোক।
৩. মাসআলাঃ
রমজান মাসে সুবহে সাদেকের পর যদি কোনো মহিলার হায়েজ, নেফাস বন্ধ হয়ে যায় এবং সে এই সময়ের মধ্যে কোনো কিছু পানাহার না করে এমতাবস্থয় যদি সে রোজার নিয়ত করে তাহলে ওই দিনের রোজা শুদ্ধ হবে না ববং পরবর্তীতে উক্ত রোজার কাজা করতে হবে, কারণ সে দিনের শুরুলগ্নে অপবিত্র ছিল।
৪. মাসআলাঃ
যদি কেউ পূর্ণ ১০ দিন ১০ রাত পর, রাতের শেষভাগে গিয়ে পবিত্র হয় এবং তখন রাতের এতটুকু সময়ও হাতে নেই যার মধ্যে একবার আল্লাহু আকবার বলতে পারে। তবুও পরের দিনের রোজা ওয়াজিব। আর যদি ১০ দিনের কমে হায়েজ বন্ধ হয় এবং এতটুকু রাত অবশিষ্ট থাকে, যার মধ্যে তাড়াহুড়া করে গোসল করে নিতে পারে তবে ১ বারও আল্লাহু আকবার বলা যায় না। তবুও পরের দিনের রোজা ওয়াজিব হবে। এমতাবস্থায় গোসল না করে থাকলে গোসল ছাড়াই রোজার নিয়ত করে নিবে, আর যদি সময় তার চেয়েও কম থাকে তাহলে রোজা হবে না, তাই সে রোজা রাখবে না। তবে সারাদিন তাকে রোজাদারের মতোই থাকতে হবে এবং পরে কাজা করতে হবে।
৫. মাসআলাঃ
হায়েজ, নেফাস অবস্থায় কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করা মুখস্থ হোক বা দেখে হোক জায়েজ নয়।
৬. মাসআলাঃ
কোনো মেয়ের হেফজ করা অবস্থায় হায়েজ এসে গেলে এবং মুখস্থ করার জন্য তেলাওয়াতের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে বা কোনো হাফেজা মেয়ের হায়েজ অবস্থায় কোরআন হেফজ করার জন্য তেলাওয়াত জারি রাখতে চাইলে মনে মনে তেলাওয়াত করবে মুখে উচ্চারণ করবে না।
৭. মাসআলাঃ
হায়েজ, নেফাসওয়ালি মহিলা বাচ্চাদেরকে কোরআন শরিফ বানান করে শিক্ষা দিতে পারবে। তবে রিডিং পড়ানোর সময় ১ শ্বাসে পূর্ণ ১ আয়াত পড়াতে পারবে না বরং শ্বাস ভেঙ্গে ভেঙ্গে ১-২ শব্দ করে পড়াতে হবে।
৮. মাসআলাঃ
কোনো মহিলা হায়েজ, নেফাস অবস্থায় আয়াতে সিজদার তেলাওয়াত শুনলে তার ওপর সিজদা করা ওয়াজিব নয়।
৯. মাসআলাঃ
হায়েজ, নেফাস অবস্থায় কোরআন শরিফ স্পর্শ করা যেমন জায়েজ নয় অনুরূপভাবে কোরআনের আয়াত কোথাও লেখা থাকলে তাও স্পর্শ করা জায়েজ নয়। তবে যদি এমন কোনো কিতাব হয় যার মধ্যে কোরআনের আয়াত অপেক্ষা অন্য কোনো লেখা বেশি থাকে তাতে হাত লাগানো যাবে, তবে আয়াতের ওপর হাত লাগানো যাবে না।
১০. মাসআলাঃ
বর্তন, পিরিচ অথবা কাগজের ওপর যদি শুধু কোরআনের আয়াত লেখা থাকে, তাতে হাত লাগানো যাবে না, তবে পৃথক কোনো কাপড় দিয়ে তা ধরা যাবে।
১১. মাসআলাঃ
কোরআন শরিফের গিলাফ যদি কোরআন শরিফ থেকে আলাদা হয়, তবে তা দ্বারা কোরআন শরিফ ধরা জায়েজ আছে। অনুরূপভাবে শরীরে থেকে বিচ্ছিন্ন কাপড় দ্বারাও কোরআন শরিফ ধরা জায়েজ আছে।
১২. মাসআলাঃ
কোরআন শরিফের সঙ্গে সংযুক্ত গিলাফ এবং যে কাপড় শরীরের সঙ্গে যুক্ত আছে যেমন উড়না, জামার আস্তিন ইত্যাদি দ্বারা কোরআন শরিফ স্পর্শ করা বা ধরা জায়েজ নয়।
১৩. মাসআলাঃ
হায়েজ, নেফাস অবস্থায় ধর্মীয় কিতাব পড়া এবং সেগুলো স্পর্শ করা জায়েজ আছে। তবে যে সব স্থানে কোরআনের আয়াত লেখা আছে তা পাঠ করা যাবে না এবং সেখানে যেন হাতের স্পর্শ না লাগে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
১৪. মাসআলাঃ
হায়েজ, নেফাস অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত ছাড়া যাবতীয় জিকির-আজকার, দোয়া-দুরুদ ও তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করা জায়েজ আছে। এমনকি দোয়ার নিয়তে কোরআনের আয়াতও পাঠ করা জায়েজ আছে।
১৫. মাসআলাঃ
পানাহারের শুরুতে বিসমিল্লহির রাহমানির রাহিম ও শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলতে কোনো অসুবিধা নেই।
১৬. মাসআলাঃ
গর্ভবর্তী বা স্তন্যদানকারিনী রোজাদার মহিলার যদি রোজা রাখার কারণে বাচ্চার বা তার প্রাণহানি মা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির প্রবল আশঙ্কা হয়, তবে রোজা ভেঙ্গে ফেলা জায়েজ; অন্যথায় জায়েজ হবে না।
১৭. মাসআলাঃ
ইস্তিহাযা (অসুস্থতাজনিত কারণে দেখা দেয়া স্রাব, নিয়মিত পিরিয়ডকালীন সময়ের বেশি সময়ে যা দেখা দেয়) অবস্থায় রোজা রাখা সহিহ এবং জরুরি। রোজা না রাখার অনুমতি নেই।
১৮. মাসআলাঃ
ইস্তিহাযা অবস্থায় মহিলারা নিজ ঘরে ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল ইতিকাফ করতে পারবে তাতে কোনো অসুবিধা নেই ।
১৯. মাসআলাঃ
ইস্তিহাযা অবস্থায় মহিলারা কোরআন শরিফ তেলাওয়াত ও স্পর্শ করতে পারবে।
২০. মাসআলাঃ
প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের প্রতিমাসে মাসিক হওয়া আল্লাহ প্রদত্ত একটি প্রাকৃতিক নিয়ম। নিয়মিত মাসিক হওয়া স্বাস্থ্যের জন্যেও উপকারী। এ জন্য ইসলামি শরিয়ত তাদের এ দিবসগুলোতে রোজা না রাখার বিধান রেখেছে। এতদসত্ত্বেও যদি কোনো নারী ঔষধ সেবনের মাধ্যমে মাসিক বন্ধ রাখে তাহলে শরিয়তের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার বাধা-নিষেধ নেই। তবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় এরূপ না করায় উত্তম। তা সত্ত্বেও যদি কেউ এমন ব্যবস্থা নেয়, তাহলে তার রোজা হয়ে যাবে।
২১. মাসআলাঃ
বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর প্রসূতি অথবা রুগ্ন দুর্বল মহিলা, যে রোজা রাখতে পারে না, এমতাবস্থায় তার পক্ষে ফিদইয়া দেয়া যথেষ্ট নয়। যদি ফিদইয়া দিয়ে দেয় এবং পরে সুস্থ হয় এবং রোজা রাখার সক্ষমতা এসে যায়, তাহলে ওই রোজার কাজা করা জরুরি।
২২. মাসআলাঃ
দুধ পান করানোর দ্বারা মহিলাদের রোজা ও অজু ভাঙ্গে না। রোজা এ জন্য ভাঙ্গে না, দুধ বের হওয়াই স্বাভাবিক। রোজা তো পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকার নাম।
[আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪২০, ফাতাওয়া দারুল উলুম: ৫/৪০৮, ফাতাওয়া দারুল উলুম: ৬/৪৭৮, আল বাহরুর রায়েক: ২/৪৪৯, ফতোয়ায়ে হক্কানি: ৪/১৫৮ ]
--- তুমি কি এসব বই পড় নাকি?
---- অসুবিধা কি? নিজে জানলাম, বউ না জানলে তাকেও শিখিয়ে দিলাম। আরও অনেক বই আছে। আর হ্যা আগামীকাল বাড়ির সবগুলো বই বাসায় নিয়ে আসবো। তুমি ইচ্ছামতো পড়তে পারবে।
---- ওয়াও! তুমি খুব ভালো একজন মানুষ। তারপর তন্ময়কে জড়িয়ে ধরে চুমু দিলো। পরবর্তিতে তন্ময়ের হাসিমুখ দেখে তাহা লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেললো।
পরদিন ফজরের নামাজ পড়ে এসে তন্ময় তাহার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো।
---কি হয়েছে তোমার? ফ্লোরে বসে কাঁদছো কেন?
তাহা উঠো, তোমার ঠান্ডা লাগবে তো। বলে তন্ময় তাহাকে বিছানায় এনে বসালো।
কিন্তু তাহা একটানা কেঁদেই চলেছে।
--- বলো না তোমার কি হয়েছে?
--- আমি মনে হয় আর বাঁচবো না! আমি অনেক খারাপ স্বপ্ন দেখেছি, আমি ব্লিডিং হয়ে মারা যাচ্ছি দেখেছি।
--- ইশ্ কি সব আবোলতাবোল দেখছো, এসব শয়তানের পক্ষ থেকে। স্বপ্নে দেখলে তুমি মারা যাচ্ছো আর তা হয়ে গেলো? আল্লাহ মানুষের হায়াত মউত সব নির্ধারণ করে রেখেছেন। তিনি মানুষ কে ভবিষ্যত জানতে দেন না। পবিত্র কোরআনে পাওনি তুমি? আল্লাহর হুকুম যখন হবে তখন এক মুহুর্ত ও অগ্রপশ্চাৎ হবে না। হাত মুখ ধুয়েছো?
---- ফজরে ওজু করে ছিলাম।
--- হুমম তাহলে বসে বসে বই পড়ো আমি নাস্তা নিয়ে আসি। আর কখনও যেন বাচ্চাদের মতো আচরণ আর কান্নাকাটি না শুনি।
তন্ময় বেরিয়ে যাওয়ার পর তাহা মন খারাপ করে ভাবতে লাগলো সত্যিই কি আমার কোন খারাপ অসুখ হয়েছে? এমন করে কেন আমার শরীরে?
নাস্তা শেষ করার পর তন্ময় বললো তুমি জানতে চাইলে না কি করে তোমার এতো খোঁজ খবর রাখতাম?
---- হুমম বলো আমার মতো কালো মেয়েকে কেনো বিয়ে করতে গেলে? আর ভালোই বা বাসতে গেলে কেনো?
---- তুমি কি জানো প্রিয়া তুমি কতটা সুন্দর?! বলে তন্ময় তাহার কোলে মাথা রাখলো।
যখন প্রথম তোমাকে দেখি মনে হয়েছিল তোমার ওই মায়াবী মুখে যেন কেউ একরাশ কালি এঁকে দিয়েছে৷ অনেক মন খারাপ করে তুমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছো। আকাশে তখন কালো মেঘের আনাগোনা, ঝড় বৃষ্টি আসার আগে প্রকৃতি যেমন থমকে থাকে তেমনি গুমোট একটা অবস্থা, তোমার মুখেও তেমন। মানুষ বলে সুন্দর পরিস্থিতি আর সুন্দর পরিবেশে ,সুন্দর মুখের হাসিতে মানুষ প্রেমে পড়ে কিন্তু আমি তখনই তোমার প্রেমে পড়েছিলাম। তোমার ওই চোখগুলোতে যেন কোন না পাওয়ার তৃষ্ণা কাজ করছিলো। মনে হচ্ছিল তখনই গিয়ে বলি "প্রিয়তমা মন খারাপ করো না আমি আছি তোমার পাশে"! কিন্তু আল্লাহর ভয় তখন মনে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিল।
পরে দেখলান তুমি নিকাব লাগিয়ে কমন রুম থেকে বেরিয়ে আসছো গেলাম তোমার পিছু পিছু গিয়ে পেয়ে গেলাম তোমাদের পাশের বাড়ির রাতুল কে যে আমাদের সাথে পড়ে। ওর কাছ থেকে তোমাদের খবর সব জানলাম। পরবর্তীতে ওর কাছ থেকে তোমার বাড়ির খবর নিতাম। আর তোমার ডিপার্টমেন্টে পড়তো হুমায়রা, ওর কাছ থেকে তোমার প্রেমে পড়া জেনেছিলাম। অবশ্য তুমি যে তার আগে অনেক ধার্মিকা ছিলে তা জেনেই তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা বেড়ে যায়। নিজেকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি, জানো তাহা, যখনই মনে পড়তো তখনই জায়নামাজে বসে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতাম আর তোমাকে হালাল ভাবে চাইতাম।
--- তুমি আমাকে তাহা ডাকবে না, চোখের কোনের অশ্রু মুছে তাহা বললো।
--- হুমম, তুমি তো আমার প্রেয়সী। আর সবচেয়ে বেশি সাহায্য পেয়েছি আমার আম্মু আব্বুর কাছ থেকে। উনারা আমরা ভাইদের প্রতি যতেষ্ট যত্নশীল আর বন্ধুবৎসল ছিলেন। বিদেশ যাওয়ার ব্যবস্থা হওয়ার পর একদিন আব্বুকে জড়িয়ে ধরে এমন কান্না শুরু করেছি। আব্বু তো অবাক, তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলে আম্মু সব খোলে বললেন। আম্মু আগেই জানতেন, তিনি আমাকে বুঝাতেন, শান্তনা দিতেন, হারাম সম্পর্ক কখনও ভালো হয়না, আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ হালাল ভাবে সব ব্যবস্থা করে দিবেন, আর যদি না থাকে আমার তাকদিরে পরকালে এরচেয়ে ভালো কিছু পাবো এসব বুঝাতেন। কিন্তু সেদিন আব্বু সম্পূর্ণ অন্য কথা বললেন, আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, " আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ তোমাকে সঠিক পথে রেখেছেন, আমাদের পরিশ্রম বৃথা যায়নি, তুমি যাও বাইরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করো, বউর মোহরানা, বাড়ি, প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ব্যবস্থা করো, আমি উনাদের বাড়িতে গিয়ে সব বলে কথা পাকা করে আসবো।"
আমি এতোটা খুশি হয়েছিলাম যে আব্বু কে ধরে খুশিতে নাচতে শুরু করেছিলাম। এমন বাবা মা কয়জনের হয় যে বাবা মা তার সন্তানকে দ্বীনী শিক্ষা, ভালো মন্দ শিক্ষা দেয়, আর বন্ধুর মতো সব সমস্যার সমাধান করে। আলহামদুলিল্লাহ!!
কিন্তু যখন তার কিছুদিন পরে জানলাম তুমি প্রেমে পড়েছো জানো কত কষ্ট হয়েছিল। একটানা এক সপ্তাহ কাজে যাইনি রুমে বসে কাঁদছি, আম্মু তখন আমাকে অনেক শান্তনা দিয়েছেন। বার বার ফোন দিতেন আর আশার আলো দেখাতেন।
---- ঠিক বলেছো, তোমাকে, তোমার পরিবার পেয়ে আমি ধন্য হয়ে গেছি। তুমি বসো আমি আসছি বলে তাহা উঠে শাশুড়ির রুমে গেলো।
--- মা আমি কি আসবো?
---- ওহ্ মামনি তুমি? আসো আসো, অনুমতি নিচ্ছো কেনো? কিছু বলবে?
--- আসলে.. আসলে.. আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি মা! বলে তাহা উনাকে জড়িয়ে ধরলো। তখন তন্ময়ও হাসিমুখে রুমে ঢুকলো।
---- এই পরিবারের সবাই ভালোবাসার পাগল, ভালোবাসা পাওয়ার জন্য উদ্ভট আচরণ করে, তুমিও দুইদিনে শিখে গেলে?
তিনি তাহাকে জড়িয়ে ধরে হাসিমুখে বললেন।
--- এই পরিবারে যারা আসবে তারা এমনই হবে আম্মু।
--- জানি তো, এই ঘর পাগলের কারখানা। রোদ উঠেছে তাহাকে নিয়ে বাহিরে ঘুরতে যা। তাহলে ওর মন শরীর ফ্রেস থাকবে, এসময় এগুলোর বেশি প্রয়োজন।
---- ঠিক আছে আম্মু।
শুরু হলো একটা পবিত্র ভালোবাসার সম্পর্ক।
খুনসুঁটি, ভালোবাসা, মান অভিমান চলতেই থাকলো। প্রতিদিন বিকালে ঘুরতে যাওয়া, রাতে তন্ময় তাহাকে বই পড়ে শুনানো, পড়তে পড়তে তাহার কোলেই ঘুমিয়ে পড়া, শুক্রবারে শাড়ি পরে শশুর শাশুড়ি কে নিয়ে মজার মজার খাবার একসাথে বানিয়ে খাওয়া। রাগ করে অন্যরুমে শুয়ে পড়া, রাগ ভাঙানোর জন্য কত রকমের চেষ্টা, প্রতিদিন তাহাজ্জুদ পড়া, সন্ধ্যায় একটা করে গোলাপ ফুল তাহার খোঁপায় গুঁজে দেওয়া। আর তার সাথে তন্ময়ের তাহার প্রতি আলাদা ভালোবাসা, বাচ্চাদের মতো আদর, কেয়ার করা। কখন যে সময় গড়িয়ে একমাস হয়ে গেলো কেউ বুঝলোই না।
হঠাৎ একদিন সকালে তাহা নাকমুখ দিয়ে বমি করে দিলো, বমির সাথে গল গল করে রক্ত আসলো তন্ময় তা দেখে তাড়াতাড়ি করে ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো।
ডাক্তার তাহার লক্ষণ জানতে চাইলে তাহা বললো, খাবারে অরুচি, ঘন ঘন জ্বর হয়, গায়ে প্রচন্ড ব্যাথা, গ্লান্ড ফুলে যায়, গ্যাস এর সমস্যা থাকে, পিরিয়ডকালীব প্রচন্ড ব্যাথা হয়, ব্লিডিংও হয় খুব বেশি। লক্ষণ শুনে ডাক্তার চিন্তিত হয়ে পড়লেন উনি কয়েকটা টেস্ট দিলেন তারপর বললেন যদি যা আশংকা করছি তা হয় তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ঢাকায় নিয়ে যাবেন। হয়তো এমনিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
---- কি আশংকা করছেন ডাক্তার?
--- এখন বলে চিন্তিত করতে চাইনা। শুক্রবার রিপোর্ট নিতে আসবেন।
শুক্রবারে দুরুদুরু বুকে তন্ময় তার বাবাকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে গেলো। ডাক্তার যা বললেন তার জন্য তন্ময় প্রস্তুত ছিলো না। ভাবছিল হয়তো খারাপ কিছু হবে কিন্তু এতবড় রোগ হবে তা ভাবতে পারে নি। সে সেখানেই বাবাকে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
-"আব্বু ওর ব্লাড ক্যান্সার আমি বিশ্বাস করিনা, এ হতে পারে না আব্বু, কোনকিছু পাওয়ার আগেই হারিয়ে যাবে এ আমি মানিনা। আব্বু ওর কিছু হলে আমি বাঁচবো না।
--- দেখুন মি. তন্ময় শান্ত হোন, সব শেষ হয়ে গেছে কে বললো? আপনি তো খুব লাকি আছেন, আগে আমার কথা গুলো শুনুন মন দিয়ে তারপর বুঝুন কি করবেন।
কান্নাভরা মুখ নিয়ে তন্ময় ডাক্তারের দিকে তাকালো।
---- দেখুন এই মুহুর্তে সবচেয়ে যেটা বেশি প্রয়োজন তা হলো মনোবল, আপনি ভেঙ্গে পড়লে আপনার স্ত্রী তো আরো ভেঙ্গে পড়বেন। উনাকে এই বিষয়গুলো জানাবেন না। আশার কথা হলো উনার যে ক্যান্সার ধরা পড়েছে তা কম ক্ষতিকর।
ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকোমিয়া মূলত দুই ধরনের, অ্যাকিউট লিউকোমিয়া ও ক্রনিক লিউকোমিয়া।
অ্যাকিউট লিউকোমিয়া খুবই মারাত্মক হয়। দ্রুত চিকিৎসা না নিলে রুগি বাঁচতে পারে না। কিন্তু ক্রনিক লিউকোমিয়ার রুগী সঠিক চিকিৎসা নিয়ে অনেকদিন বাঁচতে পারে। বর্তমানে মলিকিউলার টার্গেটেড থেরাপী আবিস্কার হওয়ায় অনেক ব্লাড ক্যান্সার ভালো হয়ে যায়। তার মধ্যে ক্রনিক মালয়েড লিউকোমিয়া অন্যতম। তবে কেমোথেরাপি চিকিৎসার পর অনেকদিন ফলোআপ এ থাকতে হয়। যেকোন ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি কাজ না করলে বা রোগ আবার হলে এইচএলএ টিস্যু ম্যাচিং ডোনার থেকে স্টিমসেল বা অস্থিমজ্জা সংগ্রহ করে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করতে হয়। এক্ষেত্রে আপনাদের চান্স ৮০% আছে বাকিটা আল্লাহর হুকুম।
---- সত্যি ভালো হবে তো ডাক্তার সাহেব?
--- আমার তো মনে হচ্ছে সম্ভব, তবে বেশিরভাগ কেমোথেরাপির ২০ভাগ অসুখ বাড়িয়ে দেয়। এক্ষেত্রে আবার অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় তা আমার জানা নেই। আপনারা তাড়াতাড়ি রুগীকে ঢাকায় নিয়ে যান। তবে হ্যা মনোবল হারাবেন না, আর রুগীকে তেজস্ক্রিয়তা, রাসায়নিক দ্রব্য থেকে দূরে রাখবেন, ফরমালিন, কার্বাইড জাতীয় জিনিস খাওয়াবেন না, উৎকট গন্ধ যেমন সুপারগ্লু, নেইলপলিশ, কসমেটিকস এর পারফিউম এসব থেকে দূরে রাখবেন। আর হ্যা হাসিখুশিতে রাখবেন। শুভকামনা রইলো আপনাদের জন্য।
পরদিনই তন্ময়ের বাবা মা সহ তন্ময় তাহাকে নিয়ে ঢাকায় রওয়ানা হলো। মনে তার আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আর আশা রয়েছে। এই কথাটাও বারবার মনে আসছে, "আমি তোমাদের পরীক্ষা করবো জান মাল দিয়ে..."
Comments
Post a Comment